গৌরীপুরে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা পেলেন ৭ হাজার ৬১৯ রোগী

মোঃ আনোয়ার হোসেন শরীফ, গৌরীপুর প্রতিনিধি: বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের ডাকে মুক্তযুদ্ধের মাধ্যমে এ মাসের ১৬ তারিখ দেশ স্বাধীন হয়। ৪৬তম মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ মো. মতিউর রহমানের উদ্যোগে এ অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত, দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা ক্যাম্পের আয়োজন করেন। মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) ময়মনসিংহের গৌরীপুরের নহাটা উচ্চ বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত দিনব্যাপী ক্যাম্পে ৪২জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক চিকিৎসাসেবা প্রদান করেন। ক্যাম্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন আহমেদ এমপি।
চিকিৎসাসেবা নিতে ক্যাম্পে আসা অশীতিপর বৃদ্ধা জুলেখা আক্তারের সাথে কথা বলে জানা যায়, স্বামী নেই, নেই কোন ছেলে-মেয়ে। নিঃস্ব এই জুলেখা আজ চোখেও দেখেন না। ছুটে এসেছেন বিনামূল্যের এই চিকিৎসা ক্যাম্পে। চক্ষু বিভাগের সামনে লাঠিতে ভর করে লাইনে দাঁড়ানো। তার বাড়ি উপজেলার সহনাটী ইউনিয়নের ধোপাজাঙ্গালিয়া গ্রামে। চক্ষু বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. মো. রফিকুল ইসলামের ভাষ্যমতে, অপারেশন প্রয়োজন হতে পারে। ক্যাম্পের আয়োজক ডা. মো. মতিউর রহমান ছুটে গিয়ে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা ও অপারেশনেরও দায়িত্ব দেন।
হার্টের সমস্যা নিয়ে আসা খোকন মিয়া(৪০) সহকারী অধ্যাপক ডাঃ আব্দুস সাত্তার ভূইয়া ভালভাবে পরীক্ষা করে ব্যবস্থাপত্র দিয়েছেন। এতে তিনি খুব সন্তুষ্ট।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ডাঃ মো. মতিউর রহমান জানান, ক্যাম্পে ৭হাজার ৬১৯জনকে ব্যবস্থাপত্র ও ওষুধ প্রদান করা হয়েছে। মাওহা ইউনিয়নের নহাটা গ্রামের আনোয়ারা খাতুন (৭০)ও চোখের সমস্যায় ভুগছিলেন। চিকিৎসা পেয়ে তিনি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। কানের ব্যথায় অস্থির রুনা আক্তার, তার চিৎকারে আশপাশের রোগীরাও অতিষ্ট। নাক, কান-গলা বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. আমানুল্লাহ ছুটে একটি ইনজেকশান দেয়ার মাত্র ৫/৭মিনিটেই সেখানে স্বস্তি ফিরে আসে। জেলা বা উপজেলা সদরে গিয়ে চিকিৎসা করার আর্থিক সামর্থ্যও নেই বিলকিস আক্তার (৫৪), জমিলা খাতুন (৬০), নুর জাহান (৩৪) তারা হাতের কাছে ডাক্তার পেয়ে আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান। কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে নহাটা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্র আরশাদুল হাসান জানান, এমন উদ্যোগ প্রতিবছরই নেয়া প্রয়োজন। রামকৃষ্ণপুর গ্রামের সুফিয়া খাতুন (৪৮) বিনামূল্যে এ ক্যাম্পে কানের সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থাপত্র ও ওষুধ পেয়ে শুকরিয়া আদায় করেন। অচিন্তপুর ইউনিয়নের শাহগঞ্জের আব্দুল আজিজ (৬০) জানান, ডাক্তাররা অনেক যন্ত্র দিয়ে দেখছে, খুব ভালো লাগছে। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত চিকিৎসা ক্যাম্পের প্রত্যেকটি কক্ষের সামনে ছিলো রোগীদের উপচেপড়া ভিড়। শৃঙ্খলায় মাওহা ইউনিয়নবাসী ও বিনামূল্যে ওষুধ প্রদানে রেনাটা লিমিটেড সহযোগিতা করেন।
ক্যাম্পে অংশ নেন সার্জারী বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. মতিউর রহমান, কনসালটেন্ট ডা. মো. আজিম উদ্দিন, ডা. মো. সাইফুল মালেক, ডা. কাজী শরিফুর রহমান সজীব, ডা. নাজিয়া ইসলাম, ডা. ফাতিমা ইয়াসমীন অন্তরা, গাইনী বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. রওশন আরা, ডা. মারুফা তানসীম, ডা. তামান্না হাসান, ডা. জান্নাত সুলতানা কুইন, ডা. তানিয়া খানম তন্বী, মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. এমদাদ উল্লাহ খান, ডা. মোহাম্মদ মহসিন, ডা. শোভন রহমান. ডা. নাজমুল ইসলাম, ডা. দেবাষীষ দে, ডা. সাকিব, নাক-কাল-গলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম খান, ডা. মুক্তাদির আরেফিন, ডা. আমানুল্লাহ খান, ডা. এমদাদ, চর্ম ও যৌন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শফিকুজ্জামান, হৃদরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আব্দুস সাত্তার ভূইয়া, ডা. মো. সাইফুল ইসলাম, অর্থোপেডিকস্ বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. মো. উল্লাহ শিমুল, ডা. একেএম মোস্তাফিজুর রহমান, চক্ষু বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. মো. রফিকুল ইসলাম, ডা. ফজলে রাব্বি, শিশু বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. মো. শফিকুল ইসলাম, নেফ্লোলজি বিভাগে কনসালটেন্ট ডা. মো. ওমর ফারুক মিয়াসহ ৪২জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী অধ্যাপক ডা. মো. মতিউর রহমানের তত্ত্বাবধানে ২০১৫সনে অচিন্তপুর ইউনিয়নের শাহগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ মাঠে ৫হাজার ৬শ ২৫জন ও ২০১৬সালে সহনাটী ইউনিয়নের পাছার উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বিনামূল্যের চিকিৎসা ক্যাম্পে ৭হাজার ৩শ ১৮জনকে সেবা প্রদান করা হয়। তিনি জানান, আমি গৌরীপুরবাসীর সেবা করার জন্য চিকিৎসক হয়েছি। আল্লাহর অশেষ রহমতে যতদিন কর্মরত ছিলাম তখনও সেবা দিয়েছি, এখন অবসরে এসেছি সেবা দিয়ে যাচ্ছি, যতদিন বেঁচে থাকবো মানুষের সেবা করে যাবো।

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।