জলসিঁড়ি সম্মাননা পাচ্ছেন পুলিশ মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান মিয়া

ইউরো আনিস: আজ ২৬ ডিসেম্বর মহান বিজয়ের মাসে গারো পাহাড়ের পাদদেশ নেত্রকোণার দূর্গাপুরের গাভিনা গ্রামে প্রতিষ্ঠিত আমাদের প্রিয় সংগঠন জলসিঁড়ির ১৫ বছর পূর্তি উপলক্ষেক্ষ জলসিঁড়ি পাঠকেন্দ্রের উদ্যোগে বীরোচিত পুলিশ মুক্তিযোদ্ধা মোঃ শাহজাহান মিয়াকে জলসিঁড়ি সম্মাননা প্রদান করা হবে। সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে নেত্রকোণা পুলিশ সুপার জয়দেব চৌধুরী জলসিঁড়ি সম্মাননা তুলে দিবেন তাঁর হাতে।
বীরোচিত পুলিশ মুক্তিযোদ্ধা ও সশস্ত্র প্রথম প্রতিরোধ যোদ্ধা মোঃ শাহজাহান মিয়া ১৯৭১ সালে রেখেছিলেন গৌরবোজ্জ্বল, সাহসী ও বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা। ২৫ মার্চ সেই ভয়াবহ কালোরাতে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে পাকবাহিনী যখন অপারেশন সার্চলাইটের নামে নৃশংসতম ও বর্বরোচিত আক্রমণ করেছিল, তখন সে আক্রমণের সংবাদ তৎকালীন ওয়্যারলেস অপারেটর শাহজাহান মিয়া, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে উদ্বুদ্ধ হয়ে, তাৎক্ষণিক নিজ উদ্যোগে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, সারাদেশে তৎকালীন ১৯টি জেলা ও ৩২টি মহকুমায় বেতার কেন্দ্রে ওয়্যারলেস বার্তা প্রেরণ করেন এবং পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে তিনিই প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধ গড়ে তোলার জন্য আহব্বান জানিয়েছিলেন। বার্তাটি ছিলো- (Base for all stations of east Pakistan police, very very important message for you. Keep note. Keep listening watch. We are already under attacked by pak army. Try to save yourself over and out.) এই যুদ্ধে প্রায় দেড় শতাধিক বাঙালি পুলিশ বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন এবং শাহজাহান মিয়া সহ শতাধিক বাঙালি পুলিশ সদস্য মরণপণ যুদ্ধ করে পাকসেনাদের হাতে বন্দি হয়ে অমানুষিক! নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন একমাত্র মহান স্বাধীনতার জন্য। এই সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমেই চুড়ান্তভাবে সূচনা হয় মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার সংগ্রাম। ১৯৭১ সালের বাঙালি পুলিশ মুক্তিযোদ্ধাগণের সেই গৌরবোজ্জ্বল, সাহসী ও বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য জাতি চিরদিন স্মরণে রাখবে।
পরবর্তীতে শাহজাহান মিয়া সেখান থেকে তিনি পালিয়ে ৪ দিন পায়ে হেঁটে নিজ বাড়ীতে আসেন এবং সহোদর দুই ভাইকে সাথে নিয়ে ভারতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ১১ নম্বর সেক্টরে কর্ণেল তাহেরের নেতৃত্বে, অসংখ্যক সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নিয়ে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় অর্জনের পর ময়মনসিংহ ইপি আর হেড কোর্য়ারটারে ২৩ ডিসেম্বর অস্ত্র ও গোলাবারুদ জমা দিয়ে ৭১ সালের ২৫ ডিসেম্বর তাঁর পূর্বেকার কর্মস্থল রাজারবাগ পুলিশ লাইনস্থ পুলিশ টেলিকমিউনিকেশন কার্যালয়ে যোগদান করেন। পরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর থেকে ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালের সেই শোকাবহ দিন পর্যন্ত গণভবনের ওয়্যারলেস কম্বাইন্ড কনট্রোল রুমে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সহ তাঁর স্ব-পরিবারকে হত্যার পর, তাঁর ওপর চলে পরবর্তী সরকারের অযাচিত,নিপীড়ন-নির্যাতন। অবশেষে ১৯৮৫ সালের এপ্রিল মাসে তিনি চাকুরী হতে অবসর গ্রহণ করেন।
ধন্যবাদ জানাই, জলসিঁড়ি প্রতিষ্ঠাতা প্রিয়জন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব দীপক সরকারকে। বীরোচিত পুলিশ মুক্তিযোদ্ধা মোঃ শাহজাহান মিয়াকে জলসিঁড়ি সম্মাননা প্রদানের সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য।
উল্লেখ্য, বীরোচিত পুলিশ এ মুক্তিযোদ্ধা মোঃ শাহজাহান মিয়ার জন্ম নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার বাট্টা গ্রামে। আমরা নেত্রকোণাবাসী বীরোচিত পুলিশ মুক্তিযোদ্ধা মোঃ শাহজাহান মিয়াকে নিয়ে গর্ববোধ করি। আপনাকেও জাতি চিরকাল স্মরণে রাখবে। হে বীর সেনা, আপনাকে স্যালুট জানাই।

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।