আবারো আলোচনায় নাটোরের এক টাকার মোড়!

নাজমুল হাসান, নাটোর থেকে: চা উৎসবকে ঘিরে আবারো আলোচনায় নাটোরের বাগাতিপাড়ার সেই এক টাকার মোড়! হাজার হাজার মানুষের অংশগ্রহণে মোড়টিতে জাকজমকপূর্ণভাবে হয়ে গেল ‘চা পান উৎসব’। দেশে প্রথম বারের মতো অনুষ্ঠিত চা পান উৎসবকে প্রাণবন্ত করতে গ্রামীন খেলা, পিঠা পুলি ও মেলার আয়োজন করা হয়। ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সকল বয়সী মানুষের আনাগোনায় মুখরিত হয়ে উঠে চা উৎসব।
গত নভেম্বরে নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার রজব আলী লালনকে নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তাতে তুলে ধরা হয় দ্রব্যমুল্যের এই উর্দ্ধগতির বাজারে এক টাকা কাপ চা বিক্রি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন গ্রাম্য এক যুবক লালন। প্রতিবেদনটি পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ভাইরাল হওয়াসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নজরে আসে। রাতারাতি রজব আলী লালন অনুকরণীয় দৃষ্টান্তে পরিণত হন। এরই ধারাবাহিকতায় মহান বিজয় দিবসকে সামনে রেখে ‘ক্লিন বাংলাদেশ’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এক টাকার মোড়ে চা উৎসবের আয়োজন করে। উৎসবে আগত প্রায় দুই হাজার অতিথিকে এক টাকার মোড়ের রুপকার রজব আলী লালন নিজ হাতে বিনামূল্যে তাঁর ছয় স্বাদের চা পান করান। গ্রামবাসীর উদ্যোগে সবাইকে বিনামূল্যে কুড়ি পিঠা ও চিতাই পিঠা খাওয়ানো হয়। পাশাপাশি উৎসবকে ঘিরে অনুষ্ঠিত হয় লাঠিখেলা, বসে মেলা। উৎসবে গ্রামের পাঁচ প্রবীণ ব্যক্তিকে একবছরের জন্য বিনামূল্যে চা পানের টোকেন তুলে দেওয়া হয় লালনের পক্ষ থেকে। লালনকে ঘিরে ভাতৃত্বের বন্ধনে সবাই আবদ্ধ হয়েছিল একই সুতোয়। এজন্য গ্রামবাসি খুবই আনন্দিত। প্রতিবছর এমন উৎসবের আয়োজন চান সবাই। এমন আয়োজনে উচ্ছ্বাসিত রজব আলী লালন ও তার স্ত্রী সুবর্ণ আক্তার সীমা।
রজব আলী লালন জানান, আমি নায়কও নই-গায়কও নই। তবুও প্রতিদিন ১৫-২০জন আমার সাথে ছবি তুলতে আসে। আমার জন্য চা উৎসব হচ্ছে। এতে আমি খুবই আনন্দিত। এই জন্য গণমাধ্যমের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
লালনের স্ত্রী সুবর্ণ আকতার সীমা বলেন, আমার স্বামীর জন্য আমি জয়িতা হিসাবে মনোনিত হয়েছি। এতে কী যে আনন্দ তা বলার ভাষা নেই।
এলাকার প্রবীণ ব্যক্তি আজাহার উদ্দিন বলেন, লালনের জন্য কতো দুর দুরান্তেন মানুষজন আসছে। এটা গ্রামবাসির জন্য বড় একটা পাওয়া।
স্থানীয় সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেন জানান, গ্রামের মানুষকে একত্রিত করে ভাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করেছে রজব আলী লালন। এ খবর জাতীয় সংসদে তুলে ধরে সরকারি উদ্যোগে জাতীয় চা উৎসব করার উদ্যোগ নেবার কথা জানান তিনি। সাংসদ রজবের চায়ের দোকানে ব্যক্তিগত তহবিল থেকে একটি এলইডি টেলিভিশন ও সরকারি খরচে একটি সোলার ল্যাম্প স্ট্যান্ড উপহার দেন।
উৎসবের আয়োজক মোস্তফা কামাল বলেন, এখন থেকে প্রতিবছরই এ উৎসবের আয়োজন করা হবে। আমরা এ ধরণের উৎসবের মাধ্যমে গ্রামের মানুষের মাঝে বন্ধুত্ব ও ভাতৃত্ব আরও মজবুত করতে চাই।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরিন বানু বলেন, ইতিমধ্যে উপজেলা প্রশাসন রজব আলী লালনের স্ত্রীকে জয়িতা হিসাবে মনোনিত করেছে। রজব আলী লালন শুধু নাটোরের বাগাতিপাড়ায় নন। সারা বাংলাদেশে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হবেন, এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।