অরক্ষিত রয়েছে নেত্রকোনার ১৭ টি বধ্যভূমি: নিমার্ণ হয়নি স্মৃতিফলক

হানিফ উল্লাহ আকাশ: স্বাধীনতা সংগ্রামের ৪৬ বছর পেরিয়ে গেছে। যুদ্ধ বিধ্বস্ত একটি দেশ এতো ক্ষয়ক্ষতির পরেও বঙ্গবন্ধু কণ্যা বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের মহা পরিকল্পনায় এখন দেশ আমূল পরির্বতনের দিকে। এই পরির্বনের ধারা অব্যাহত রাখতে এবং প্রতিটি গ্রামের গ্রামের এর ছোয়াকে ব্যাপক ভাবে বিস্তার করার লক্ষ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের সর্ব সাধারণের প্রাণের দাবী যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্য শুরু হয়েছে এবং কয়েকজন কুখ্যাত রাজাকারের ফাসিঁও সম্পন্ন করেছে ট্রাইবুন্যাল। কিন্তু ১৯৭১’র মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস যতটা গর্বের, ঠিক তেমনি অগণিত শহীদের রক্তস্নাত নেত্রকোনার ১৭ টি বধ্যভূমির ঐতিহ্যের কথাও ততটা বেদনার। স্বাধীনতার ৪৬ বছর পরও অরক্ষিত অবহেলায় পড়ে থাকা এ বধ্যভূমিগুলিতে নির্মান করা হয়নি কোন স্মৃতিফলক। আর গণ কবর গুলিতে স্মৃতি ফলক নির্মিত না হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন শহীদ পরিবারের সদস্য সহ মুক্তিযোদ্ধারা।
স্বাধীনতার ৪৬ বছর পেরিয়ে গেলেও আজো নেত্রকোণার ১৭ টি বধ্যভূমির অধিকাংশ তেই চিহ্নিত কওে সেখানে স্মৃতিফলক নিমার্ণ করা হয়নি। জেলা শহরের সাতপাই টেকনিকেল স্কুলের ভেতরে, ত্রিমোহনী কিংবা মুক্তারপাড়ার মতো স্থানেও গড়া হয়নি স্মৃতিফলক। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে এলাকার আলবদর, রাজাকারদের সহযোগিতায় পাকবাহিনী নিরীহ মুক্তিকামী অসংখ্য বাঙালিকে ধরে নিয়ে এখানে নির্মমভাবে হত্যা করে এসব বধ্যভূমিগুলিতে ফেলে রাখত। ১৯৭১ সালে পাক সেনারা অসংখ্য মা-বোনেদের ধরে নিয়ে এসব স্থানে শারিরিক নির্যাতনের পর হত্যা করত। অগনিত শহীদের বুকের রক্তে ভেজা এসব মাটি মুছে যেতে বসেছে স্মৃতির মানসপট থেকে। অনেকেই এসব স্থানে অবৈধ দক্ষলের পাঁয়তারা করছে। অযতেœ আর অবহেলায় দীর্ঘদিন এসব স্থান পড়ে থাকলেও তা সংস্কারের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয় না। মাঝে মাঝে জাতীয় দিবস গুলো আসলে কিছু কিছু বদ্ধ ভূমির কদর বাড়ে কিন্তু তাছাড়া সারা বছরই থাকে অযতেœ আর অবহেলায়। শহীদ পরিবারের সন্তান মো. আব্দুর রব রব্বানী বলেন, আমার চাচা বদিউজ্জামান মুক্তা,সিদ্দিকুর রহমান সহ যে ৬ জনকে বিরামপুর বাজারে হত্যা করে হয় সেই স্থানকে ঘিরে কোনো স্মুতি ফলক নির্মাণ হয়নি। যদি ভাল করে স্মৃতি ফলক নির্মাণ করা হতো তাহলে আগামী প্রজন্ম তার ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারতো তাই জরুরি ভিত্তিতে হত্যার স্থানে স্মৃতি ফলক নির্মাণের দাবী তার।
এ ছাড়াও পূর্বধলার ত্রিমোহিনীতে সবচে বড় ট্রাজেডি ঘটেছিল ৭১’র ২২ সেপ্টেম্বর। সেদিন হানাদাররা সুরেশ সাহা, সতীস সরকার, স্বদেশ দত্তসহ ২৫ জন নিরিহ হিন্দু বাঙালিকে ধরে এনে গুলি করে হত্যা করেছিল প্রকাশ্য দিবালোকে। স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর জেলার সবচে বড় বধ্যভূমিগলো পড়ে আছে অযতেœ আর অবহেলায়। হয়তো কিছুদিন পর নতুন প্রজন্ম জানতে পারবে না একাত্তরে কী ঘটেছিল এসব বধ্যভূমিতে। আগামী প্রজন্ম কাছে এসব শহীদদের নাম ও ইতিহাস ধরে রাখতে জেলার ১৭টি বধ্যভূমিতে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ সহ এগুলোকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার দাবি মুক্তিযোদ্ধাসহ এলাকাবাসীর । নেত্রকোনা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ও মুক্তিযুদ্ধের ঔতিহাসিক হায়দার জাহান চৌধুরী বলেন, স্বাধীনতার এতো বছরের কেন বদ্ধভূমি গুলোতে স্মৃতি ফলক নির্মাণ করা হয়নি তা আসলে অবাক করার মত। আমি চাই এসব স্থানে শহীদদের নাম সম্বলিত আধুনিক স্মৃতি ফলক নির্মাণ করবে প্রশাসন।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক ড. মুশফিকুর রহমান বলেন, আমি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জেলার যে সব বদ্ধভূমিতে রয়েছে সেখানে স্মৃতি ফলক নির্মাণের জন্য প্রস্তাব পাঠিয়েছি। অনুমোদন পেলেই তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।