
মোঃ আনোয়ার হোসেন শরীফ, গৌরীপুর প্রতিনিধি : ময়মনসিংহের গৌরীপুরে বৃহস্পতিবার যুবলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন মঞ্চে দুর্বৃত্তরা পুড়িয়ে দেয়, ইউএনও’র বাসভবনসহ ৫টি স্থানে পেট্টোল বোমা নিক্ষেপ, এমপি’র কুশপুত্তলিকা দাহ, ঝাড়–-জুতা নিয়ে বিক্ষুব্দ যুবলীগের নেতাকর্মীরা শহরে বিক্ষোভ মিছিল করে। ইউএনও ১৪৪ধারা জারি করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য পুরো শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এ রির্পোট পাঠানো পর্যন্ত ১৪৪ধারা বলবৎ রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু চত্বরে মঞ্চ তৈরি করা হয়। ভোরে দুর্বৃত্ত্বরা মঞ্চের একপাশের কাপড়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। অপরদিকে উপজেলার সিনেমা হল মোড়, স্টেশন রোড মোড়, কালীপুর মধ্যম তরফ, বালুয়াপাড়া বাজারে একযোগে সকাল ৯টায় পেট্টোল বোমা বিস্ফোরণের খবর পাওয়া যায়। সকাল সোয়া ১০টার দিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মর্জিনা আক্তারের বাসভবনে বোমা বিস্ফোরণের অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শী ইউএনও’র বাসার কাজের মহিলা সাতুতী গ্রামের নুর ইসলামের স্ত্রী জোহরা খাতুন জানান, সকাল সোয়া ১০টার দিকে বাসার পিছনের দিক থেকে হঠাৎ বিকট শব্দ শোনতে পাই। এরপর আগুন ধরে যায়। ইউএনও মর্জিনা আক্তার জানান, ঘটনাস্থলে বোমার বিস্ফোরণের কাচ ও বোমার আলামত রয়েছে। গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ দেলোয়ার আহম্মদ জানান, পেট্টোল বোমা বিস্ফোরণের আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। ঈশ্বরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার মাহফুজুর রহমানের ফায়ার সার্ভিসের ২টি ইউনিট ঘটনাস্থল থেকে বোমার আলামত নিষ্ক্রিয় করেন। বালুয়াপাড়ার এক প্রত্যক্ষদর্শী জানায়, মোটর সাইকেল যোগে দু’জন মুখোশ পরিহিত লোক তাদের বয়স ২০/২৫বছর হতে পারে রাস্তায় বিস্ফোরণ করেই দ্রুত বেগে চলে যায়। সিনেমা হল মোড়ে দু’তিন লোক দ্রুত বেগে এসে বোমা বিস্ফোরণ করে পালিয়ে যায়। এ ঘটনার পরপরই পুরো শহরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে দুপুর ১২টায় পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সম্মেলন স্থান বঙ্গবন্ধু চত্বর, হারুণ পার্ক ও আশপাশের এলাকায় ১৪৪ধারা জারি করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মর্জিনা আক্তার। ১৪৪ধারা জারির পরপর ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ প্রার্থী পৌর কাউন্সিলার মোফাজ্জল হোসেন খান, সম্মেলন স্থগিত করতে জামাত-শিবিরের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতেই ইউএনও এ আদেশ দিয়েছেন। এ আদেশের প্রতিবাদে তাৎক্ষনিক উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের সামনে যুবলীগের বিক্ষুব্দ নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করে।
উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মো. সানাউল হক জানান, জাতীয় সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন আহমেদ তাঁর পুত্র তানজীর আহমেদ রাজীবকে সভাপতি করার জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতির নিকট ডিও লেটার দেন। তার পুত্র না হওয়ায় সুষ্ট পরিবেশ থাকার পরেও ১৪৪ ধারা জারি করে সম্মেলন করতে দেয়নি। নাজিম উদ্দিন আহমেদ এমপি জানান, এ অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমাকে করার জন্য ডে ডিও লেটার দেয়া হয়েছিলো, তা প্রত্যাহার করার পরেই কাউন্সিলের প্রস্তুতি নেয়া হয়। যুবলীগের আভ্যন্তরিন ঘটনার কারণেই ইউএনও’র বাসভবনসহ বিভিন্ন স্থানে নাশকতামূলক কাজ করে আতঙ্ক ছড়ানো হয়েছে, যা অত্যন্ত নিন্দনীয়।
সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক তপন সাহা জানান, যেহেতু প্রশাসন ১৪৪ধারা জারি করেছে তাই সম্মেলন স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তীতে তারিখ ও সময় জানানো হবে। উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মো. সানাউল হক ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মোফাজ্জল হোসেন খানের নেতৃত্বে বিক্ষুব্দ নেতাকর্মীরা শহরে ‘জুতা-ঝাড়–’ নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এমপি’র বিরুদ্ধে নানা শ্লোগানের বিক্ষোভ মিছিলটি দলীয় কার্যালয় থেকে বের হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এরপর কালিখলায় এমপি’র প্রতিচ্ছবিতে অগ্নিসংযোগ ও কুশপুত্তলিকা দাহ করেন বিক্ষুব্দ নেতাকর্মীরা।
১৪বছর ৪মাস ৩দিন পর এ কাউন্সিলকে ঘিরে রাজনীতির মাঠ সরব ছিলো ময়মনসিংহের গৌরীপুর। পৌর শহরের বঙ্গবন্ধু চত্বরে এ সম্মেলনে ২০০জন কাউন্সিলারের ভোটে নূতন নেতৃত্ব বেড়িয়ে আসবে এমন প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ছিলেন প্রস্তুতি কমিটি। সম্মেলনে ময়মনসিংহ জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলামের সম্মেলন উদ্বোধক, প্রধান অতিথি মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন আহমেদ এমপি ও প্রধান বক্তা কেন্দ্রিয় যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বদিউল আলম বদি, সম্মেলন বক্তা হিসাবে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাবু সুব্রত পাল অংশ নেয়ার কথা ছিলো। সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক তপন সাহা জানান, সভাপতি পদে মো. সানাউল হক, ইকবাল হাসান আজাদ লিটন, সাধারণ সম্পাদক পদে মোফাজ্জল হোসেন খান, আবু সাঈদ ও জয়নাল আবেদিন প্রার্থী ছিলেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বাসাসহ ৫টি ঘটনাস্থল থেকে ময়মনসিংহ গোয়েন্দা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মো. আশিকুর রহমান ও এসআই পরিমল চন্দ্র সরকার বোমা বিস্ফোরণস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ ও পরিদর্শন করেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট আরিফ আহমেদ। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মর্জিনা আক্তার জানান, পরিস্থিতি যতক্ষণ পর্যন্ত স্বাভাবিক হবে না ততক্ষণ পর্যন্ত ১৪৪ধারা বলবৎ থাকবে। গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ দেলোয়ার আহম্মদ জানান, পুরো শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এদিকে সন্ধ্যায় ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মোঃ খলিলুর রহমান ও ময়মনসিংহ পুলিশ সুপার সৈয়দ নূরুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরির্দশ করেন। ময়মনসিংহ পুলিশ সুপার সৈয়দ নূরুল ইসলাম বলেন, বোমা নিক্ষেপের ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।