বারহাট্টায় খোলা আকাশের নীচে চলছে পাঠদান

স্টাফ রিপোর্টার: নেত্রকোনা জেলার বারহাট্রা উপজেলার সিংধা ইউনিয়নের ৯২ নং আশিয়ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ ভবনটি গত এপ্রিল মাস থেকে কর্তৃপক্ষ পরিত্যক্ত ঘোষনার পরও অদ্যাবদি সংস্কার না করায় বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা খোলা আকাশের নিচে দীর্ঘদিন যাবৎ পাঠদান করে আসছে।
এলাকার কোমলমতি শিশু কিশোরদের প্রাথমিক শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে কতিপয় শিক্ষানুরাগী আশিয়ন প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে এটি বেসরকারী রেজিষ্ট্রার প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং তারও পরবর্তী সময়ে সকল বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সরকারী করণ করা হলে এটিও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে অর্ন্তভূক্ত হয়।
প্রথম দিকে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনায় এবং শিক্ষকদের যতœ সহকারে নিয়মিত ক্লাস নেওয়ায় বিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বৃদ্ধি পাওয়ায় দিন দিন ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। বিদ্যালয়টি সরকারী করণের পর থেকেই নিয়মিত মনিটরিং না থাকায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান তেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে না। বিদ্যালয়ে পাঁচজন শিক্ষকের মধ্যে প্রধান শিক্ষক ও অপর একজন মাতৃত্ব জনিত ছুটিতে থাকায় বর্তমানে ৩জন শিক্ষক দিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
এলাকার ছাত্র শিক্ষক ও অভিভাবকদের অভিযোগ, নিন্মমানের সামগ্রী দিয়ে বিদ্যালয় ভবনটি নির্মাণের কয়েক বছরের মধ্যে ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দেয়। ছাদ ও দেয়াল থেকে প্লাষ্টার খসে পড়তে থাকে। তারপরেও বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান অব্যাহত রাখে। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে প্রথম সাময়িক পরীক্ষা চলাকালে বিদ্যালয় ভবনের ভীম ভেঙ্গে পড়ে আবুল হাসান নামে ৫ম শ্রেণীর এক ছাত্র গুরুতর ভাবে আহত হয়। এরপর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিদ্যালয় ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন। বিদ্যালয় ভবন পরিত্যক্ত ঘোষনার পর বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা স্কুল সংলগ্ন খোলা জায়গায় খোলা আকাশের নিচে স্কুলের পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে আসছে।
স্কুলের পরিত্যক্ত ভবনটি সংস্কারের জন্য বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যথাযথ ভাবে সংশ্লিষ্ট কর্র্তপক্ষের বরাবরে বার বার আবেদন-নিবেদন করার পরও এখন পর্যন্ত কোন কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। ঝড়-বৃষ্টি, রোদ মাথায় নিয়ে বৈরী পরিবেশে খোলা আকাশের নিচে ক্লাশ করতে করতে অনেক কোলমতি শিশু অসুস্থ হয়ে পড়ায় অনেকে বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে আকাশে মেঘ দেখলেই স্কুলের ছুটির ঘন্টা বাজাতে বাধ্য হয় স্কুল কর্তৃপক্ষ। এমতাবস্থায় ক্রমান্বয়ে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা হ্রাস পেতে শুরু করেছে। বর্তমানে ১৬১ জন ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার একেবারেই হতাশাজনক। দ্রুত বিদ্যালয় ভবনটি পুননির্মাণে কার্যকর ব্যবস্থা না করা হলে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কমতে কমতে এক সময় বিদ্যালয়টি বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করেেছন।
আবুল হাসেম, রইছ উদ্দিন, কিতাব আলীসহ অনেক অভিভাবক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, কত দিন আর শিশুদের এইভাবে খোলা আকাশের নিচে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে হবে। সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহন করা না হলে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে অন্য কোন স্কুলে ভর্তি করাবো।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনিছুর রহমান বলেন, খোলা আকাশের নিচে ঝড়-বৃষ্টি, রোদের মধ্যে আর কত দিন ক্লাশ চালানো সম্ভব জানি না। পরিত্যক্ত বিদ্যালয় ভবনটি পুননির্মাণের জন্য সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষের বরাবরে বার বার আবেদন নিবেদন করার পরেও এখন পর্যন্ত কোন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এ কে এম রিয়াজ উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, বিষয়টি এ মূহুর্তে মনে পড়ছে না। বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখবো।

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।