বাউল বাড়িতে চির নিদ্রায় শায়িত গানের পাখি বারী সিদ্দিকী

হানিফ উল্লাহ আকাশ: নিজের তৈরী বাউল বাড়ীতে শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে শেষ নিদ্রায় শায়িত হলেন বাংলাদেশের গানের পাখি বার সিদ্দিকী।
সহজ সরল ভাষায় গানের গীতিকার ও ফোক গানের কিংবদন্তি গায়ক নেত্রকোনার কৃতি সন্তান বারী সিদ্দিকীর অকাল মৃত্যুতে নেত্রকোনা সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। তাঁর মৃত্যুতে পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা ও শোক জানিয়েছেন,ভারতীয় উপ-মহাদেশের যাত্রা জগতের বিবেক স¤্রাট নেত্রকোনার মোহনগঞ্জের শ্রী গৌরাঙ্গ আদিত্য, নেত্রকোনার বাউল স¤্রাট সিরাজ উদ্দিন খান পাঠান (অন্ধ সিরাজ), জনপ্রিয় উদীয়মান বাউল শিল্পী গোলাম মৌলা, ফোক শিল্পী ও সাংবাদিক ইউরো আনিস, সাহেল রানা,মানবাধিকার নাট্য পরিষদের সভাপতি সালাহ উদ্দিন খান রুবেল, নেত্রকোনা সাহিত্য সমাজের সভাপতি কবি কামরুজ্জামান চৌধুরী ও সম্পাদক সাইফুল্লাহ এমরান, নেত্রকোনা উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সম্পাদক নিলম বিশ্বাস রাতুল, সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হক বাচ্চু, কেন্দ্রীয় সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান, শিকড় শিল্পী গোষ্টির সম্পাদক জিয়াউর রহমান খোকন, সভাপতি আফম রফিকুল ইসলাম খান আপেল,বিশিষ্ট লোক গবেষক গোলাম এরশাদুর রহমান সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সহ সাধারণ মানুষও।
বারী সিদ্দিকী নেত্রকোনা সদর উপজেলার মৌগাতি ইউনিয়নের ফাইছকা গ্রামের এক বিশিষ্ট সংগীত পরিবারের জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বড় ভাই মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসেম ছিলেন একজন যাত্রাভিনেতা, তাঁর মা ছিলেন গীত সংগীতের জন্য এলাকায় বেশ পরিচিত। পরবর্তীতে বারী সিদ্দিকী বংশিবাদক হিসেবে সংগীত জগতে প্রবেশ করেন। এরপর থেকে শুরু হয় বাংলা ফোক গানের কিংবদন্তি গায়কের সংগীত চর্চা। বারী সিদ্দিকী প্রথমে ওস্তাদ গোপাল দত্ত, রফিক মাহমুদ, দুলাল পত্ররবীশসহ বিভিন্ন সঙ্গীতজ্ঞের কাছ থেকে সংগীতের তালিম নিয়ে শুরু করেন ফোক গানের চর্চা। তিনি বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও চলচিত্র নির্মাতা হুমায়ুন আহমেদের শ্রাবণ মেঘের দিনের চলচিত্রের মাধ্যমে গান গেয়ে তিনি চলচিত্র জগতে পা রাখেন। তখন থেকে তিনি ফোক গানের জন্য দেশের বিদেশে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছেন। বারী সিদ্দিকী শিক্ষা জীবনে নেত্রকোনা সরকারী কলেজের ছাত্র সংসদ নিবার্চনে ১৯৭৯ সালে নজরুল,হাবিব,ভানু পরিষদের নাট্য সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি ছাত্র জীবনে রাজনৈতিক ভাবে বেশ জনপ্রিয় ছিলেন। এছাড়া তিনি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে জড়িত ছিলেন । বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রোগাম প্রোডিউসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বারী সিদ্দিকী বাউল সংগীত র্চচার জন্য এবং বাঙ্গালীর হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যে আগামী প্রজজে¥র কাছে পৌছে দেয়ার জন্য সদর উপজেলার রৌহা ইউনিয়নের কারলি গ্রামে নিজ উদ্যোগে তৈরী করেছেন “বাউল বাড়ি” নামে একটি বাউল গবেষণা কেন্দ্র।
বারী সিদ্দিকী মরদেহ ঢাকায় দু দফা নামাজের জানাযা শেষে নিয়ে আসা হচ্ছে নেত্রকোনায়। মরদেহ নেত্রকোনা সরকারী কলেজ মাঠে রাখা হবে । সেখানে বাদ আছর তার নামাজের জানাযা শেষে সদর উপজেলার রৌহা ইউনিয়নের তাঁর বাউল বাড়ীতে দাফন করা হবে পারিবারিক ভাবে জানানো হয়েছে।
বারী সিদ্দিকীর সম্বন্ধি (স্ত্রীর বড় ভাই ) বিশিষ্ট আওয়ামীলীগ নেতা অধ্যাপক ওমর ফারুক জানান, বারী সিদ্দিকী তার মৃত্যুও আগেই কবর স্থানের নির্ধারিত স্থান পরিবারের লোকদের দেখিয়ে গেছেন। তিনি বাউল বাড়ীর কোথায় চির নিদ্রায় ঘুমাবেন। ফারুক আরো জানান,বারী সিদ্দিকীর ইচ্ছা ছিল এখানে একটি বাউলদের প্রশিক্ষান কেন্দ্র স্থাপন ও একটি উচু মিনার সম্বলিত মসজিদ স্থাপন করার পরিকল্পনা ছিল।
এছাড়াও বারী সিদ্দিকী এলাকায় যখনি আসতেন তখনি স্থানীয় বাউল শিল্পীদের নিয়ে সঙ্গীতের চর্চা ও আড্ডায় ব্যস্ত সময় পার করতেন। স্থানীয় বাউলরা জানান, তিনি সঙ্গীত চর্চাকে বিশ্বের দরবারের পৌছে দেয়ার জন্য নিরলস ভাবে কাজ করে গেছেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। বারী সিদ্দিকীর এই কর্মময় জীবনে অসংখ্য গেয়েছেন এবং তিনি নিজেও গান রচনা করেছেন। পারিবারিক ভাবে তার বড় ছেলে সাব্বির সিদ্দিকী অভিনেতা,মেয়ে এলমা সিদ্দিকী ও ছোট ছেলে বিলাশ সিদ্দিকী সঙ্গীত শিল্পী এছাড়াও তার স্ত্রী পারভিন সিদ্দিকী একজন তানপোড়া বাদক হিসেবে পরিচিত।
বারী সিদ্দিকী নেত্রকোনার মৌগাতি ইউনিয়নের ফাইছকা গ্রামের মরহুম মহরম আলী ও মাতা মরহুম জেবুন্নেছার পরিবারের জন্মগ্রহণ করেন। পিতার সংসারের দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। বারী সিদ্দিকী গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়া শুনার পর নেত্রকোনা আনঞ্জুমান আর্দশ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে থেকে এসএসসি পাশ করেন। পরবর্তীতে নেত্রকোনা সরকারী কলেজে এইচ এস সি পাশ করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগীতের উপর পড়াশুনা করেন। পরে বাংলাদেশ টেলিভিশনের চাকুরিতে যোগদান করেন।

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।