কেন্দুয়ায় ঘুমন্ত বৃদ্ধ নারীকে হত্যার রহস্য জট খুলছেনা

কেন্দুয়া প্রতিনিধি: নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার বলাইশিমুল ইউনিয়নের সরাপাড়া গ্রামে সুলেমা খাতুন (৫৫) নামে ঘুমন্ত বৃদ্ধ নারীকে খুনের ঘটনাটি রহস্যজনক বলে ধারণা করছে পুলিশ ও এলাকাবাসী। যদিও এ ঘটনায় গত ১৩ নভেম্বর নিহত বৃদ্ধার ছেলে ছলিম উদ্দিন বাদী হয়ে কেন্দুয়া থানায় প্রতিবেশী দুই নারীসহ ৬ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ এখনও এ হত্যা কান্ডের সঠিক কারণ জানতে না পারলেও মূল রহস্য উদঘাটনে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
গত ১২ নভেম্বর ভোর ৪টার দিকে ঘুমন্ত অবস্থায় খুন হন সুলেমা খাতুন। ওই ঘরে নিহতের স্বামী মতি মিয়া ও তাদের আট বছরের নাতি তামিম নামে এক শিশু ছাড়া আর কেউ ছিল না। তাই মতি মিয়াই ভালো জানেন তার স্ত্রীর খুনী কে? কিন্তু ঘটনার পর পুলিশসহ সাংবাদিকদের কাছে দেওয়া মতি মিয়ার বক্তব্য বিভ্রান্তিকর বলে মনে হয়। ঘটনার পরপরই কেন্দুয়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহত বৃদ্ধার সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে। বৃদ্ধার বুকের নিচে ছুড়িকাঘাতের চিহৃ পাওয়া যায় বলে জানায় পুলিশ। এ সময় পুলিশ ওই ঘর থেকে একটি ছুড়িও উদ্ধার করে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবেশী খোরশেদ আলীর ছেলে বশির মিয়া, আফতাব উদ্দিনের ছেলে জজ মিয়া ও সবুজ মিয়াসহ তাদের লোকজনের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে মতি মিয়ার জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছিল। এসব ঘটনায় আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। এরই জের ধরে তারা গত ১২ নভেম্বর ভোর ৪টার দিকে একই উদ্দেশ্যে ধারালো অস্ত্রসশস্ত্র নিয়ে প্রতিপক্ষ মতি মিয়ার বসতঘরের বেড়া ভেঙে ঘরে ঢুকে। বিষয়টি টের পেয়ে বেড়া ভেঙে পালিয়ে প্রাণ রক্ষা করে মতি মিয়া। পরে ঘুমন্ত বৃদ্ধা সুলেমাকে ছুড়িকাঘাত করে পালিয়ে যায় প্রতিপক্ষের লোকজন। পরে ওই ঘরে থাকা শিশু তামিমের ডাক-চিৎকারে প্রতিবেশী লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। মোবাইল ফোনে এ ঘটনার খবর পেয়ে কুমিল্লা থেকে নিহত সুলেমা খাতুনের ছেলে ছলিম উদ্দিন এলাকায় এসে তার পিতা ও তার শিশুপুত্রের কাছে ঘটনার বিস্তারিত অবগত হয়ে থানায় হত্যা মামলা করেন।
সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় এলাকাবাসী, প্রতিবেশী আনারকলি ও মামলার সাক্ষী আবুল হাসেম, রবিউল আওয়াল, নিহতের স্বামী সাক্ষী মতি মিয়া এবং নিহতের ছেলে জসিম উ্িদনের সঙ্গে। তবে মামলার বাদী ছলিম উদ্দিন, সাক্ষী আজিজুল মেম্বার ও শিশু তামিম এলাকায় না থাকায় মোবাইল ফোনে তাদের সঙ্গে কথা হয়।
নিহতের স্বামী মতি মিয়া দাবী বশির, সবুজ ও জজ মিয়ার সাথে আমার জমিজমা নিয়ে শত্রুতা ও আদালতে মামলা আছে। এরই জের ধরে আমাকে খুন করার জন্য বশির আমার ঘরের বেড়া ভেঙে ভিতরে ঢুকে দরজা খুলে দিলে আরো ৪/৫ জন ঘরে ঢুকে। এ সময় আমি প্রাণের ভয়ে বেড়া ভেঙে পালিয়ে যাই। পরে তারা আমার স্ত্রীকে ছুড়িকাঘাত করে পালিয়ে যায়।
প্রতিবেশী আনারকলি আক্তার জানান, আমাকে নিহতের ছেলে জসিম ঢাকা থেকে মোবাইল করে তাদের বাড়িতে কি ঝামেলা হয়েছে গিয়ে দেখতে বলে। আমি গিয়ে দেখি মতি চাচা তার ঘরের দুয়ারে বসে কাঁপছে। ঘরের ভিতরে গিয়ে দেখি চাচি (সুলেমা খাতুন) বিছানায় পড়ে আছেন। তখন তার শরীর থেকে রক্ত ঝরছিল এবং অস্পষ্টভাবে কথাও বলছিল। আমি তাকে প্রশ্রাব করিয়ে বাড়িতে চলে আসি।
সাক্ষী আবুল হাসেম ও রবিউল আউয়াল জানান, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে মতি মিয়াকে দেখতে পাই আর ঘরের ভিতরে তার স্ত্রীর মরা দেহ। তবে কে বা কারা এ খুন করেছে তা আমরা বলতে পারব না।
মামলার বাদী ছলিম উদ্দিন জানান, আমি বাড়িতে থাকি না। মোবাইল ফোনে এ ঘটনার খবর পেয়ে কুমিল্লা থেকে বাড়িতে আসি। আমার বাবা এবং ছেলে মায়ের সাথে ছিল। তাদের কাছে বিস্তারিত শুনে মামলা করেছি। আমি আমার মায়ের হত্যার সঠিক বিচার চাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, মতি মিয়া একজন কুচক্রী মানুষ। তার অনেক অপকর্মই এলাকাবাসী জানে। আহত সুলেমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ারও চেষ্টা করা হয়নি। তবে পুলিশ মতি মিয়া আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে মূল রহস্য বেরিয়ে আসবে বলে জানান তারা।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কেন্দুয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ছামেদুল হক জানান, মামলার প্রাথমিক তদন্ত কাজ চলছে। মূল রহস্য উদঘাটনে পুলিশ তৎপর রয়েছে।
কেন্দুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, অভিযোগের প্রেক্ষিতে মামলা হয়েছে। রহস্যজনক এ হত্যাকা-ের তদন্ত চলছে। সঠিক তথ্য প্রমাণাদি ছাড়া কে বা কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তা বলা যাবে না। তবে নিহতের স্বামী মতি মিয়াও পুলিশের সন্দেহের মধ্যে রয়েছে।

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।