হাওরের বীজতলায় পানি: বোরো চাষাবাদ নিয়ে শংকিত খালিয়াজুরীর চাষিরা

শফিকুল ইসলাম তালুকদার,খালিয়াজুরী প্রতিনিধি: নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলার হাওরগুলো এখনো পুরোপুরি শুকিয়ে না যাওয়ায় কৃষকরা বোরো বীজতলা তৈরি করতে পারছেনা। কবে নাগাদ বোরো ফসল রোপণ সম্ভব হবে তাও অনিশ্চিত। সঠিক সময়ে বোরো চাষাবাদ শুরু করতে না পারলে দেরিতে ফসল উঠবে বলে কৃষকরা মনে করছে। ফলে গত বছরের মতো আবার অকাল বন্যায় ফসল তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
খালিয়াজুরীর কৃষক মনির হোসেন বলেন, এবার দেরিতে জমি রোপণ করতে হবে। তাই ফসল ভালো হওয়ার আশা করে লাভ নেই। আরো ১০-১২দিন পরে বীজ (তাঁর ভাষায় ‘জালা’) ফেললে শীতের কারণে ভালো চারা পাওয়া যাবেনা। ভালো চারা না হলে ভালো ফসলও হবেনা। তাছাড়া দেরিতে ধান উঠবে বলে আবারও আগাম বন্যায় ফসল হানির আশঙ্কা রয়েছে বলেও জানান তিনি ।
কাদিরপুরের প্রবীণ কৃষক শ্রী চরণ সরকার বলেন, ধনু নদীর উৎস এবং সুরমার মোহনা থেকে উত্তরাঞ্চল খানিকটা উঁচু। আবার নেত্রকোনার খালিয়াজুরীর ধনু নদী থেকে কিশোরগঞ্জের ইটনা পর্যন্ত হাওর এলাকাটি তুলনা মূলক নিচু। ওদিকে ইটনা থেকে কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মধ্যবর্তী মেঘনার মোহনা পর্যন্ত এলাকাটি ভরাট হয়ে উঁচু হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে মেঘনার মোহনা থেকে উত্তর দিকে নদী খনন অত্যন্ত জরুরি। না হয় বছর বছর অকাল বন্যা থেকে ফসল রক্ষা করা সম্ভব হবেনা।
উপজেলা সদরের প্রয়াত ধনাঢ্য কৃষক আব্দুস শহীদ তালুকদারের স্ত্রী আলেছা তালুকদার স্বামীর মৃত্যুর পর নিজেই জমির দেখাশোনা করেন। হাওরে তাঁদের প্রায় ৬০ একর জমি আছে। জমির চাষাবাদ ও পত্তন থেকে আসা আয় দিয়েই তাঁর সংসার চলে। গেল বারের আগাম বন্যায় ফসল বিনিষ্ট হওয়ার কারণে এখনকার ও জমি চাষ করতে আগ্রহ নেই। তিনি জানান, গত বার মার খেয়ে কৃষকরা তাঁর জমি পত্তন নিতে চাইছেনা। এবার হাওর থেকে পানি না সরায় কেউই বীজতলা তৈরি করতে পারছেনা। এসব কারণে এবার মাত্র ১৬ একর জমি ৪০ হাজার টাকায় পত্তন দিতে পেরেছেন। বাদ বাকি জমি পতিত থাকার আশঙ্কা করছেন তিনি।
হাওরাঞ্চল জুড়েই এখন কৃষকের আহাজারি। এসমস্যা কেবল খালিয়াজুরীর নয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়,ধর্মপাশার পূর্বাঞ্চল তাহেরপুরের মাটিয়ানি হাওর, শাল্লার ছায়ার হাওর, দিরাইয়ের বরাম হাওর ও কালিয়াকুটা হাওর, জামালগঞ্জের হাওর, বিশ^ম্ভরপুরসহ অনেক এলাকায় এ অবস্থা বিরাজ করছে।
স্থানীয় কৃষকরা জানায়, নয়াগাঁও হাওরে যে বীজতলায় আর ও এক সপ্তাহ আগে ধান বপন করা হতো,সেই ক্ষেতে এখনো পানি লেগে আছে। যে কারণে ওই অঞ্চলের কৃষকরা চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছে। তারা বলছেন, তাদের ফসল বোনার স্বপ্ন মরে গেছে।
কৃষি বিশেষজ্ঞ ও হাওরের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাওরের বিভিন্ন স্থানে অপরিকল্পিত ভাবে বেড়িবাঁধ নিমার্ণ করা হয়েছে। এছাড়া গত বোরো মৌসুমসহ অসময়ে ভারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে হাওরের নদীগুলো খনন না করায় সেগুলো ভরাট হয়ে গেছে। অন্যদিকে মেঘনা নদীতে তিনটি ব্রীজ হয়েছে। এসব কারণেই পানি সরতে দেরি হচ্ছে।
খালিয়াজুরী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শফিকুল ইসলাম জানান, হাওরের পানি সরছে তবে তা খুবই ধীর গতিতে। গতবার এ সময়ে এবারের চেয়ে পানি অনেক বেশি কমে গিয়ে ছিল বলে স্বীকার করেন তিনি । তিনি আরো জানান ব্রি ধান ২৯ বপনের সময় পার হয়ে গেলেও ব্রি-২৮ জাতের ধান বীজ বপনের সময় রয়ে গেছে।

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।