রাখাইনে গিয়ে বিবাদে না জড়ানোর আহ্বান সু চির

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনে নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের দেখতে প্রথমবার রাখাইন সফরে গিয়ে নিজেদের মধ্যে বিবাদ না করার আহ্বান জানিয়েছেন সু চি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সমালোচনার মধ্যে কোনো ঘোষণা ছাড়াই আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিটুয়ে থেকে একটি সামরিক হেলিকপ্টারে চড়ে মংডুর উদ্দেশ্যে রওনা দেন তিনি।

রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরাকান প্রজেক্ট মনিটরিং গ্রুপের ক্রিস লিওয়া মংডুতে উপস্থিত এক রোহিঙ্গা ইমামের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, মংডুতে গিয়ে সু চি সড়কপথে রোহিঙ্গাদের এলাকায় যান। পরে সেখানে তিনি গাড়ি থেকে নেমে রাস্তায় জড়ো হওয়া মানুষের সঙ্গে কথা বলেন।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, “সু চি মুংডুতে তিনটি বিষয়ে কথা বলেছেন। তিনি সেখানে বলেছেন, তাদের শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে হবে, সরকার তাদের সহায়তা করবে এবং নিজেদের মধ্যে বিবাদ করা উচিৎ নয়।”

ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তাসহ প্রায় ২০ জন রাখাইন সফরে সু চির সঙ্গে ছিলেন। তাদের মধ্যে জ জ নামের এক ব্যবসায়ীও রয়েছেন, যার ওপর এক সময় যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ছিল।

গত ২৫ অগাস্ট রাখাইনের এ অঞ্চলে নতুন করে সেনা অভিযান শুরুর পর নির্বিচারে হত্যা ও নির্যাতনের কারণে প্রায় সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। বুধবার রাতেও সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে চার হাজার রোহিঙ্গা।

রাখাইনে কয়েকশ বছর ধরে রোহিঙ্গা মুসলমানদের বসবাসের ইতিহাস থাকলেও ১৯৮২ সালে আইন করে তাদের নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করা হয়। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এবং ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতাই রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালি সন্ত্রাসী’ ও ‘অবৈধ অভিবাসী’ হিসেবে বর্ণনা করে আসছেন।

গত কয়েক দশকে বহুবার সেনাবাহিনী এবং রাখাইনের বৌদ্ধদের নিপীড়নের শিকার হয়েছে রোহিঙ্গারা। এবারের ছয় লাখের বাইরে আরও প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা গত কয়েক দশকে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে এসেছে প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে।

নোবেল বিজয়ী সু চির দল এনএলডি ২০১৫ সালের নির্বাচনে বিপুল বিজয়ের মধ্যে দিয়ে মিয়ানমারের ক্ষমতায় আসার পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রত্যাশা ছিল, তিনি হয়ত রাখাইনে শান্তি ফেরানোর উদ্যোগ নেবেন। কিন্তু রোহিঙ্গাদের নাগরিক হিসেবে মেনে নেওয়া বা অধিকার বঞ্চিত ওই জনগোষ্ঠীর দুর্দশা নিজের চোখে দেখার জন্য রাখাইনে যাওয়ার কোনো আগ্রহ তিনি এর আগে দেখাননি।

গতবছর ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের তিনটি সীমান্ত পোস্টে ‘বিদ্রোহীদের’হামলায় নয় সীমান্ত পুলিশ নিহত হওয়ার পর রাখাইনে সেনা অভিযান শুরু পরও সেখানে ব্যাপক হত্যা-নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছিল। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে সে সময় রাখাইনে যাওয়ার জন্য সু চির প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছিল। কিন্তু সে সময় তার সাড়া মেলেনি।

রাখাইনের ৩০টি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনাক্যাম্পে বিদ্রোহীদের হামলার পর গত ২৫ অগাস্ট এবারের অভিযান শুরু হয়। ওই অভিযানকে জাতিসংঘ ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসেবে বর্ণনা করার পর আন্তর্জাতিক সমালোচনার মধ্যে সু চিকে একই পরমার্শ দেন কয়েকজন নোবেলবিজয়ী।

শর্টলিংকঃ
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কৃর্তপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।